কারক কাকে বলে – বুৎপত্তিগত ভাবে কারক শব্দটি তৎসম বা সংস্কৃত ভাষার সূত্রে এলেও আমরা এখন ইংরেজি case শব্দের প্রতিশব্দ হিসাবে ‘কারক’ শব্দের ব্যবহার করি। অথচ সঙ্কৃত অনুসারী বাংলা ব্যাকরণের ‘কারক’ এবং ইংরেজি ব্যাকরণের ‘case’ -এর তাৎপর্য একরকম নয়। সুপ্রাচীন ব্যাকরণবিদ পাণিনির মতে, ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্তর্গত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের যে সম্পর্ক থাকে তাই-ই হল কারক। *Join Telegram*
কারক কাকে বলে?
বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক, তাকেই কারক বলে।
কারক কত প্রকার ও কি কি?
ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্তর্গত নামপদ অর্থাৎ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের যে সম্পর্ক, তা-ই হল কারক। এই সম্পর্কের প্রকারভেদ এবং গঠনগত রূপবৈচিত্র্য বিচার করলে আধুনিক বাংলায় মোট ছয়টি কারক সম্পর্ক পাওয়া যায়। তা নিচে দেওয়া হলঃ
- কর্তৃ কারক
- কর্ম কারক
- করণ কারক
- নিমিত্ত কারক
- অপাদান কারক
- অধিকরন কারক
কারক চেনার সহজ উপায়
1. কর্তৃকারক
বাক্যে যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে বলা হয় কর্তা। বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে কর্তার যে সম্পর্ক, তাকেই বলা হয় কর্তৃ কারক।
কর্তৃ কারক চেনার সহজ উপায়ঃ বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘কে’ / ‘কারা’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় সেটিই কর্তৃ কারক।
বাক্য | প্রশ্ন | কর্তৃ কারক |
---|---|---|
আমি ভাত খাই | “কে” ভাত খায়? | আমি |
রোনাল্ডোরা কাপ জিতেছে | “কারা” জিতেছে? | রোনাল্ডোরা |
মা রান্না করছে | ‘কে’ রান্না করছে? | মা |
ছাত্ররা ফুটবল খেলছে | “কারা” খেলছে? | ছাত্ররা |
2. কর্মকারক
বাক্যের করতে যা করে অর্থাৎ যাকে আশ্রয় করে কর্তা কোনো কাজ বা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে কর্মকারক বলে।
কর্মকারক চেনার সহজ উপায়ঃ বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কী’ / ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় সেটিই কর্মকারক।
বাক্য | প্রশ্ন | কর্মকারক |
---|---|---|
আমি ভাত খাই | “কী” খাই? | ভাত |
রোনাল্ডোরা কাপ জিতেছে | “কী” জিতেছে? | কাপ |
মা শিশুকে ভাত খাওয়াচ্ছেন | ‘কাকে’ খাওয়াচ্ছেন? | শিশুকে |
ছাত্ররা ফুটবল খেলছে | “কী” খেলছে? | ফুটবল |
You Can Also Read: Bengali Letter Writing Book PDF
3. করণকারক
বাক্যে কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে – করণকারক বলা হয়।
করণ কারক চেনার সহজ উপায়ঃ বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কী দিয়ে’ / ‘কার দ্বারা / ‘ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় সেটিই করণ কারক।
বাক্য | প্রশ্ন | করণ কারক |
---|---|---|
অনেকেই বাঁ হাত দিয়ে লেখে | “কি দিয়ে” লেখে? | বাঁ হাত |
পৈতায় বামুন চিনি। | “কি দিয়ে” বামুন চিনি? | পৈতায় |
মা শিশুকে হাত দিয়ে ভাত খাওয়াচ্ছেন? | “কি দিয়ে” ভাত খাওয়াচ্ছেন? | হাত দিয়ে |
টাকায় সব মেলে, বন্ধুত্ব মেলে না। | “কি দিয়ে” সব মেলে? | টাকায় |
4. নিমিত্ত কারক
যখন কোনো ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর জন্য বাক্যের কর্তা কোনো ক্রিয়া সম্পাদন করে তখন যার জন্য কাজটি করা হয় তাকে নিমিত্তকারক বলে।
নিমিত্ত কারক চেনার সহজ উপায়ঃ বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কী জন্যে’ / ‘কিসের জন্যে’ / কার জন্য / কার তরে / কিসের নিমিত্ত দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় সেটিই নিমিত্ত কারক।
বাক্য | প্রশ্ন | নিমিত্ত কারক |
---|---|---|
আমি লেখাপড়ার জন্য কোলকাতায় এসেছি। | “কিসের জন্য” কোলকাতায় এসেছি | লেখাপড়ার |
সকলের তরে আমরা | “কার তরে” আমরা? | সকলের তরে |
5. অপাদান কারক
যে কারকে কোনো পদ পতিত, চলিত, ভীত, গৃহীত, রক্ষিত, জাত, বিরত, বিকৃত ইত্যাদি ক্রিয়া সমন্ধ নিষ্পন্ন করে, তাকে অপাদান কারক বলে।
অপাদান কারক চেনার সহজ উপায়ঃ বাক্যের ক্রিয়াকে ‘থেকে’ / ‘হইতে’ / দিয়া / নিকট / অপেক্ষা দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় সেটিই অপাদান কারক।
বাক্য | প্রশ্ন | অপাদান কারক |
---|---|---|
বাবাকে আমার যত ভয় | “কার থেকে” আমার যত ভয় | বাবাকে |
তর্কে বিরত হও | “কী হইতে” বিরত হও? | তর্কে |
6. অধিকরণ কারক
বাক্যের ক্রিয়ার আধারকে অধিকরণ কারক বলা হয়।
অধিকরণ কারক চেনার সহজ উপায়ঃ বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কোথায়’ / ‘কখন’ / কী বিষয়ে / দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় সেটিই অধিকরণ কারক।
বাক্য | প্রশ্ন | অধিকরণ কারক |
---|---|---|
নীল আকাশে ভাসলে সাদা মেঘের ভেলা | “কোথায়” ভাসলে সাদা মেঘের ভেলা? | আকাশে |
কালকে এসো | “কখন” এসো? | কালকে |