সিন্ধু সভ্যতাঃ সুদূর অতীতে মিশরের নীলনদ, পশ্চিমে এশিয়ার টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস উপত্যকায় যেরকম সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল, প্রায় একই সময়ে ভারতের সিন্ধু উপত্যকায় এক উন্নতমানের সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল। এই সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত।
এই সভ্যতা সিন্ধু নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে পাওয়া যায় বলে দীর্ঘদিন এই সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতা নাম পরিচিত ছিল।
কিন্তু, পরবর্তীদিনে সিন্ধু উপত্যকা ছাড়া অন্যত্রও এই ধরনের সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে, তাই সিন্ধু সভ্যতা নামকরণ যুক্তিযুক্ত নয়। তবে হরপ্পায় এই সভ্যতার নিদর্শন সবচেয়ে বেশি আবিষ্কৃত হওয়ায় সামগ্রিকভাবে সিন্ধু সভ্যতার প্রতীকরূপে ‘হরপ্পা সভ্যতা’ নামকরণ করা হয়েছে।
সূচিপত্র
সিন্ধু সভ্যতা কে আবিষ্কার করেন?
1922 খ্রিস্টাব্দে বাঙালী প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কার করেন। এর পর জন মার্শাল, দয়ারাম সাহানী, মর্টিমার হুইলার প্রমুখ প্রত্নতত্ববিদ এই সভ্যতার অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা সংক্ষেপে লেখ
ভারত তথা বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার এক যুগান্তরী ঘটনা। 1922 সালে হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনত্ব ও মৌলিকত্ব সম্পর্কে বিশ্বের সমস্ত সংশয়ের অবসান হয়। সুপ্রাচীন এই সভ্যতার আর্থ-সামাজিক জীবনের মত নগর জীবনও যে উন্নত ছিল, তা নীচের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে উঠে –
(১) হরপ্পা সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হল যে, এটি ছিল এক অতি উন্নত নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। নগর পরিকল্পের দুটি প্রধান দিক হল যে, প্রত্যকেটি নগর দুর্গ দ্বারা বেষ্টিত ছিল। উঁচু ঢিপির উপর দুর্গ নির্মাণ করা হত। শাসক শ্রেণীর লোকেরা দুর্গের অভ্যন্তরে বসবাস করতেন আর নগর দুর্গের নীচে অবস্থিত উপনগরীতে ছিল সাধারণ মানুষের বসবাস।
(২) দুর্গের নিচে প্রায় দেড় কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে প্রকৃত শহর বিস্তৃত ছিল। প্রতিটি শহর তার চারিদিকের প্রশস্ত রাজপথ দ্বারা কয়েকটি অংশে বিভক্ত ছিল। গলিপথগুলি ছিল বড় রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত।
(৩) গলিপথগুলির দুপাশে বসতবাড়ির অবস্থান ছিল। হরপ্পা নগরে পাথরের তৈরী বাড়ির নিদর্শন পাওয়া যায়নি। বাড়িগুলির অধিকাংশই পোড়া ইট দিয়ে তৈরী হতো। এই সমস্ত বাড়িগুলি সাধারণত প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকতো।
(৪) নির্মাণ শৈলীর দিক থেকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মহেনজোদারোর স্নানাগার ও হরপ্পার শস্যাগার। মহেনজোদারোর বিশালাকার স্নানাগারটির আয়তন ছিল ১৮০ x ১০৮ ফুট, স্নানাগারের অভ্যন্তরে অবস্থিত জলাশয়ের আয়তন ছিল ৩৯ x ২৩ ফুট এবং গভীরতা ছিল ৮ ফুট। হরপ্পায় যে শস্যাগারের নিদর্শন পাওয়া গেছে তার আয়তন ছিল দৈর্ঘে ১৬৯ ফুট এবং প্রস্থে ১৩৫ ফুট।
আরও পড়ুনঃ ভারতের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ও আন্দোলন PDF
সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারন
প্রামাণ্য তথ্যের অভাবে সিন্ধু সভ্যতার উত্থানের মত পতনের কারন সমন্ধেও সঠিক কিছু জানা যায় না। তবে ঐতিহাসিকরা তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ও আর্থ সামাজিক – বিশেষত বৈদেশিক আক্রমনকেই পতনের সম্ভাব্য কারন বলে মনে করেছেন, যেমনঃ
(১) প্রাকৃতিক কারণ: হরপ্পা সভ্যতার পতনের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে এম. আর সাহানী, রাইকেস, ডেইলস প্রমুখ ঐতিহাসিকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্ৰকোপকে চিহ্নিত করেছেন। এই প্রসঙ্গে রাইকেস বলেছেন, বস্তুত সিন্ধু নদীতে ক্রমাগত বন্যা দেখা দেওয়ায় এই সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে।
(২) আর্থ সামাজিক কারণ : এম ট্যাডি, হুইলার প্রমুখ ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন বিদেশী জাতিরা আক্রমনের ফলের এই সভ্যতার বিনাশ ঘটেছিল বলে মনে করেন। এই আক্রমণকারীদের অনেকেই “বৈদিক আর্য” বলে অভিহিত করেছেন।
অনেক ঐতিহাসিক হরপ্পাসভ্যতার পতনের জন্য নগর কর্তৃপক্ষের অপদার্থতা ও নাগরিকদের চারিত্রিক অবনতিকে দায়ী করেছেন। হরপ্পা সভ্যতার শেষের দিকে পৌর প্রশানের দুর্বলতা এবং নাগরিকদের স্বৈরাচার এই সভ্যতাকে পতনের দিকে ঠেলে দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, সভ্যতার পতনের মুলে বিভিন্ন কারনে সমাবেশ ঘটেছিল। তবে, সিন্ধু লিপির পঠ্ঠোদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত সিন্ধু সভ্যতার বিলুপ্তির রহস্য সঠিকভাবে উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
উত্তরঃ সিন্ধু সভ্যতার অপর নাম হরপ্পা সভ্যতা।
উত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব প্রায় তিন হাজার বছর আগে এই সভ্যতার উন্মেষ হয়।
উত্তরঃ 1922 খ্রিস্টাব্দে বাঙালী প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কার করেন।
উত্তরঃ সিন্ধু সভ্যতা সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত।
উত্তরঃ উত্তর-পশ্চিম ভারতে মেহেরগড় সভ্যতা ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার আগমনের পূর্বে এই সভ্যতার আবির্ভাব হয়।
উত্তরঃ বাঙালী প্রত্নতত্ববিদ রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় 1922 খ্রিস্টাব্দে প্রথম এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করেন।
উত্তরঃ মহেঞ্জোদারো কথার অর্থ মৃত্যের স্তুপ।
উত্তরঃ সিন্ধু সভ্যতার লিপির নাম – সিন্ধু লিপি।
- ব্রিটিশ গভর্নর ও গভর্নর জেনারেল তালিকা PDF
- Indian History Gk In Bengali PDF
- ভারতের বিভিন্ন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা, শ্রেষ্ঠ রাজা ও শেষ রাজাদের নামের তালিকা
- ভারতীয় ব্যক্তিদের বিখ্যাত ঐতিহাসিক উক্তি